পানির স্রোতের তোড়ে ফতুল্লার তিনটি ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে গেছে। অপরদিকে উত্তরে রয়েছে ডিএনডি বাঁধের ভেতরের এলাকা। সেখানে অল্প বৃষ্টি হলেই জমে যাচ্ছে পানি। ডিএনডি বাঁধ ছাড়াও ফতুল্লার আরও কয়েকটি এলাকাতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে ফতুল্লাবাসী।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ঈদুল আজহার আগের কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকাতে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সে কারণে অনেক ভুক্তভোগী এ জলাবদ্ধতায় ডিএনডি এলাকা ছেড়ে চলে যান। কেউ আশ্রয় নিচ্ছে অন্যত্র। যেহেতু ফতুল্লা এলাকাতে প্রচুর শিল্প প্রতিষ্ঠান সেহেতু এ এলাকাতেই লোকজনের বসবাস বেশি। আর এ ফতুল্লা এলাকাটি ডিএনডি বাঁধের ভেতরে। সেখানেই সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা।
ফতুল্লার লালপুর, কাঠেরপুল, পৌষাপুকুরপাড় ইসদাইর এলাকাতে দেখা গেছে, এসব এলাকায় একসময় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করতো। তবে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার কারণে অনেক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। তবে কিছু মানুষ এই জলাবদ্ধতার মধ্যেও বসবাস করছেন। যাতায়াতের জন্য নৌকা এবং ভ্যানগাড়ি থাকায় যুবকদের ভোগান্তি তুলনামূলক কম হলেও শিশু, বৃদ্ধ, রোগী এবং গর্ভবতী নারীদের যাতায়াতের ভয়াবহ দুর্ভোগের পড়তে হচ্ছে তাদের। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও শিল্প কারখানা। আর এ ভাবে লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগে দিন পার করছেন। সড়কের কোথাও হাঁটু আবার কোথাও ছিল কোমর সমান পানি।
লালপুরের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মানুষ কমতে কমতে এখন শেষের দিকে। আমার মতো যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিল সবার ব্যবসা শেষ। এলাকায় মানুষ নেই ব্যবসা করবো কিভাবে? যারা শুধু বাড়ি ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতো তারাও দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।’
লালপুর প্রসঙ্গে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, ‘এলাকাটিতে যেহেতু কোনো খাল নেই তাই জলাবদ্ধতা নিরসন অসম্ভব। আমাদের হাতে কিছু করার নেই। আর পাশে বুড়িগঙ্গা নদী আছে কিন্তু সেখানে নিষ্কাশন ব্যবস্থাও সহজ বিষয় না। আমরা চেষ্টা করছি এই এলাকাকে যাতে ডিএনডি প্রজেক্টের মধ্যে নেয়া যায়। কিন্তু ডিএনডি প্রজেক্টের কাজ এখনও শেষ হয়নি। প্রজেক্টের কাজ শেষ হলে তো আমরা নতুন করে কোনো এলাকাকে যুক্ত করতে পারবো। ডিএনডি প্রজেক্টের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই।’
এদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে নারায়ণগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে । গত কয়েকদিনে ফতুল্লার তিনটি ইউনিয়নে পানির স্রোতের তোড়ে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে গেছে । গত বুধবার রাতে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয় বক্তাবলী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের রাস্তা-ঘাট, দুশতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। জেলার ফতুল্লা থানার বক্তাবলী, কুতুবপুর এবং এনায়েতনগর ইউনিয়নের ১০টি ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে সহস্রাধিক পরিবার।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গার পানিতে এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের ৩০০ থেকে ৩৫০টি ঘরে পানি ঢুকেছে। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানিতে কাশিপুর ইউনিয়নে ৩নং ওয়ার্ডের ২৫০ থেকে ৩০০, বক্তাবলী ইউনিয়নের ১ ও ৩নং ওয়ার্ডের ১৫০ থেকে ২০০ এবং আলীরটেক ইউনিয়নে ১ ও ৬নং ওয়ার্ডের ৩০ থেকে ৩৫টি ঘরে পানি ঢুকে গেছে। আর নদীর পানির স্রোতে কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংপুর ও বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর এলাকার দুটি এক তলা পাকা বাড়ি ধসে গিয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও বালু নদীর পানিও বাড়ছে। যার মধ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বন্দর উপজেলার বন্দর খেয়াঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে খেয়া পারাপারের যাত্রীদের।
সদর উপজেলার উত্তর নরসিংপুর এলাকার আকলিমা বেগম বলেন, ঘরের ভেতরে কোমর সমান পানি হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির কলগুলো নদীর পানিতে ডুবে গেছে।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক বলেন, ‘গত বুধবার রাত ৮টা থেকে দুই নদীর (বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী) পানি বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে পানির স্রোতে একটি সেমিপাকা ঘর ধসে গেছে। আরেকটি হেলে পড়েছে। আমরা ওইসব পরিবারের সাথে কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের আশ্রয়ের জন্য একটি প্রাইমারি স্কুল খুলে দেয়া হয়েছে।’
নাহিদা বারিক বলেন, করোনা শেষ হয়ে যায়নি। এখনও আমরা মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি। কর্মহীন মানুষদের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। আশা করি বন্যা পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে পারবো। ইতোমধ্যেই আমরা ত্রাণ দিতে শুরু করেছি।